ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করব? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো | Freelancing করে আয় করুন।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না? সমস্যা কিসের! চলুন এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক- ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরুণ প্রজন্মের মাঝে। ফ্রিল্যান্সিং কী, ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কী, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো; আজকে এবিষয়ে জানবো। জানবো আসলেই ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা যায় কি না। এছাড়াও জানবো, ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বেছে নেওয়া ঠিক হবে কি না।
অনেক মানুষ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাইলেও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে শুরু করতে পারছে না। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আপনার জানাশোনা একদম না থাকলেও এই লেখা শেষে বেশ সুন্দর একটা ধারণা পেয়ে যাবেন।
বর্তমান সময়ে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে ঝুঁকছে। আবার সঠিক নিয়ম কানুন না জানার ফলে ছিটকে পরছে খুব অল্পতেই। খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় এই পেশায় টিকে থাকতে প্রথমে স্কিল ডেভলপ্ট করতে হয়। আবার জানতে হয় কাজ করার মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রিল্যান্সিং এর আদ্যোপান্ত নানান তথ্য।
ফ্রিল্যান্সিং কাকে বলে
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) হলো নিজের কম্পিউটার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের নিমিত্তে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের (Clients) সাথে স্বল্প সময়ের চুক্তিভিত্তিক কাজ; যা উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বা না হয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এখানে যিনি ফ্রিল্যান্স সেবা দিয়ে থাকেন অর্থাৎ চুক্তিভিত্তিক কাজটি করে থাকেন তাকে ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) বলা হয।
আশা করছি ফ্রিল্যান্সিং কী তা বুঝতে আর বাকি নেই।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর মধ্যে পার্থক্য
আমরা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং আর আউটসোর্সিংকে একই মনে করি। অথচ এ’দুয়ের মাঝে সুক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। নিচে এদের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য দেয়া হলো:
ফ্রিল্যান্সিং | আউটসোর্সিং |
---|---|
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) হলো নিজের কম্পিউটার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের নিমিত্তে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের (Clients) সাথে স্বল্প সময়ের চুক্তিভিত্তিক কাজ; যা উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বা না হয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। | যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে বা নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরের লোকবলকে দিয়ে কোনো কাজ করিয়ে নেয় তখন উক্ত কাজকে আউটসোর্সিং (Outsourcing) বলে।অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সারকে যিনি হায়ার করেন (Buyer/Client) তার এই কাজটিকে আউটসোর্সিং বলে। |
আশাকরি, ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ের মাঝে বিদ্যমান পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কী
ফ্রিল্যান্সিং কেন শিখবেন? এর ভবিষ্যতই বা কি?
দিনকে দিন ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। কারণ, বর্তমানে উন্নত বিশ্ব স্থায়ী কর্মীর বদলে ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে কাজ করাতে পছন্দ করছে। এতে তারা কম খরচে কাজ করিয়ে নিতে পারছে; যার ফলে লাভের পরিমাণ বাড়ছে।
কে না চায় অল্প খরচে স্বল্প সময়ে কাজ করিয়ে নিতে!
এদিকে কাজের চাহিদা বাড়তে থাকায় অনেক অনলাইন মার্কেটপ্লেসও গড়ে উঠছে। তাই নির্দ্বিধায় পছন্দের বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজের চাহিদা বেশি
ফ্রিল্যান্সিং সাইটে অসংখ্য কাজ রয়েছে। এর মধ্যে অধিক জনপ্রিয় এবং কম বা বেশি প্রতিযোগিতামূলক সব ধরনের কাজই আছে। অনেকেরই জানতে চাওয়া, “অনলাইনে কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি?” তাদের জন্য নিচে সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং কাজের তালিকা দেয়া হলো:-
- Web Design
- Web Development
- Content Writing
- Virtual Assistance
- Video Editing
- Graphic Design
- Search Engine Optimization
- Digital Marketing
- Social Media Marketing
- Translation
- Mobile App Development
- 3D Animation
এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে অসংখ্য বিষয়ে কাজ পাওয়া যায়। এর মধ্য থেকে পছন্দের যেকোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করুন।
মনে রাখবেন, ভালো কাজটি করার থেকে যে কাজটি করতে ভালো লাগে সেটা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করব
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই আপনার পছন্দের বিষয়টি নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে যে কাজটির প্রতি আপনার বেশি আগ্রহ সেই কাজটিকে আপনি নির্বাচন করুন।
অনেক সময় দেখা যায়, শুরুতে একটি বিষয়ে আগ্রহ থাকে। উক্ত বিষয় কিছুদিন চর্চা করার পর তাতে অনাগ্রহের সৃষ্টি হয়। তাহলে ধরে নিন, এই বিষয়টি আসলে আপনার জন্য না।
এবার দেখুন এটির পরবর্তীতে আপনার কোন বিষয়ে কাজ শিখতে বা করতে আনন্দ লাগছে। যে বিষয়টিতে আপনার সময় দিতে ভালো লাগে সেটিতে দক্ষতা অর্জন করুন।
দক্ষতা যেহেতু রাতারাতি আসে না, তাই ধৈর্য্য ধরে পছন্দের কাজটি শিখতে থাকুন। মনে রাখবেন এখন আপনার শিক্ষানবিশকাল, তাই টাকার কথা আপাতত মাথায় না এনে ভালো করে কাজ শিখুন।
যত সময় নিয়ে কাজ শিখবেন তত কাজের ভালো আউটপুট দিতে পারবেন। আর যত ভালোভাবে কাজ শিখতে পারবেন, কাজের মার্কেটপ্লেসে তত বেশি স্থায়ী হয়ে কাজ করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কী প্রয়োজন
এবার জানবো, ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কী প্রয়োজন।
কাজ শিখে দক্ষতা অর্জন এবং কাজ করার জন্য ডিভাইস দরকার। স্মুথলি কাজ করার জন্য অবশ্যই ভালো মানের ডিভাইসের প্রয়োজন।
যদি ভালো ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ না থাকে, তাহলে মোটামুটি কনফিগারেশনের একটি ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ সংগ্রহ করুন।
শুধুমাত্র ভারি কাজ করতে চাইলে একটু ভালো কোয়ালিটির ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ নিতে হবে। যেমন ধরুন, আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখবেন। তখন নিশ্চয়ই আপনার কম ফিচারের ল্যাপটপ বা ডেক্সটপে হবে না।
পূর্বে থেকে কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা না থাকলে অন্যের সহায়তায় অথবা ইউটিউব থেকে কম্পিউটার পরিচালনার সাধারণ বিষয়গুলো আগে শিখে নিন।
অনলাইনে আপনার নির্বাচিত বিষয়ে হাজার হাজার ফ্রি ব্লগ এবং কোর্স পাবেন। সেখান থেকে ক্রমান্বয়ে আপনাকে স্কিল গড়তে হবে। আপনি যদি কোনো প্রশিক্ষকের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে চান তাও নিতে পারবেন।
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া যায়
আজকাল হাজার হাজার তরুণ-তরুণী পড়াশোনার পাশাপাশি আবার কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বেছে নিচ্ছেন। ধরাবাঁধা সরকারি চাকরির পিছনে দৌঁড়ে জুতা ক্ষয় না করে অনলাইনেই নিজের ক্যারিয়ার করে নিচ্ছে ঘরে বসে।
আপনিও চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে পারেন হাজার হাজার টাকা। তবে এজন্য আপনাকে প্রথম ৬ মাস থেকে ১ বছর কাজ শিখতে হবে (বিষয়ভেদে আরও কম বা বেশি সময় লাগতে পারে)। যত ভালো করে কাজ শিখবেন মার্কেটপ্লেসে আপনি তত ভালো কিছু করতে পারবেন।
একটি সরকারি চাকরীর জন্য ২২-২৩ বছর পড়াশোনা করে আবার আলাদাভাবে চাকরীর পড়া পড়তে হয়। সেখানে মাত্র ৬ মাস থেকে ১ বছর কাজ শিখে ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করাটা অস্বাভাবিক কিছু না। ভালোভাবে কাজ শিখে মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করতে পারলে কাজ আপনার হাতে ধরা দিবেই।
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে যারাই আসে তাদেরকে কিছু বিষয়ে বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। দরকার হয় মানসিক শক্তির।
এবার জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গঠনের সব বাঁধা বিপত্তি থেকে বের হওয়া যায়।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গঠনে নানা প্রতিবন্ধকতা
আপনি কম্পিউটার অন করলেন, কয়েকটি বাটন চাপ দিলেন আর আপনার একাউন্টে ডলার এসে গেলো; বিষয়টা একদমই এমন না। ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার জন্য দরকার যথেষ্ট সময়, মানসিক শক্তি, ধৈর্য, পারিবারিক সহযোগিতা এবং প্রবল আগ্রহ।
আপনাকে স্বাভাবিক ভাবেই ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য প্রথম দিকে শুধু সময় দিয়ে কাজ শিখতে হবে। আপনি যদি চান, প্রথমেই আয় করবেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং পেশা আপনার জন্য না। আবার অনেকে আছেন, ধৈর্য ধরে মনিটরের সামনে একনাগাড়ে অনেক সময় বসে থাকতে পারেন না। তাহলেও বলতে হয় ফ্রিল্যান্সিং তাদের জন্য না।
কাজ শিখতে হবে তাই শিখতেছি এভাবেও কাজ শেখার মানসিকতা রাখা যাবে না। মানসিকভাবে প্রচুর ধৈর্য রাখতে হবে। এমনকি কাজ শিখে মার্কেটপ্লেসে ঢুকেই আপনি কাজ নাও পেতে পারেন। তখন একদমই হতাশ হওয়া যাবে না। কাজ পাওয়ার একাধিক উপায় সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে এই বিষয়ে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্রায় ৯৯ ভাগ বাবা-মা চায় সন্তান পড়াশোনা করে চাকরি করুক। এর অন্যতম কারণ, ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে তাদের ধারণা অনেক কম। কিন্তু, আপনাকে আপনার কাজ শেখা এবং টাকা আসা শুরু না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের সাপোর্ট একান্ত দরকার হবে।
তাই তাদেরকে খুব নমনীয় ভাবে সহজ ভাষায় ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বোঝাতে হবে। পরিবারকে বোঝাতে পারলেন কি না এটিও আপনার জন্য ফ্রিল্যান্সিং জগতে আসার ক্ষেত্রে একটি মানসিক পরীক্ষা।
একটি ডিভাইস/পিসি বিল্ড করার সময়ে, পেইড কোর্স কেনার সময়ে, বিভিন্ন কিছু ক্রয়ের জন্য টাকা দরকার হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার পরিবারের সাপোর্ট একান্ত দরকার। আবার দেখা যায় আপনি টিউশনি করেও এই খরচ মেটাতে পারেন।
এছাড়াও বিভিন্ন ভাবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গঠনে বাঁধা পেতে পারেন। যা একটি একটি করে সুন্দর ভাবে সমাধান করতে হবে। তবেই এই বাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার মাধ্যমে।
ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার জন্য কোন কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করবেন সে সম্পর্কে জানা যাক।
জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট
কাজ শেখার পর কোন কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য একাউন্ট খুলতে হবে তা জানা একান্ত প্রয়োজন। তাই এমন কয়েকটি সেরা মার্কেটপ্লেসের কথা জেনে নেওয়া যাক; যেখানে আপনি আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে একাউন্ট করে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করতে পারেন।
এক্ষেত্রে কিছু মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে একাউন্ট করার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে আপনার দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়।
জেনে নেওয়া যাক ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার জন্য কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইটের নাম।
- Fiverr – www.fiverr.com
- Upwork – www.upwork.com
- Freelancer – www.freelancer.com
- FlexJobs – www.flexjobs.com
- Toptal – www.toptal.com
- PeoplePerHour – www.PeoplePerHour.com
- Guru – www.guru.com
- 99designs – www.99designs.com
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার জন্য এই মার্কেটপ্লেসগুলো সবথেকে বেশি পরিচিত, নিরাপদ এবং বিশ্বাসযোগ্য মার্কেটপ্লেস। এসকল মার্কেটপ্লেসে কাজ করলে এদের সিস্টেম অনুযায়ী আপনার একাউন্টে টাকা জমা হতে থাকে।
এভাবে নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট টাকা হলে আপনি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা উঠাতে পারবেন। বলে রাখা ভালো, এই মার্কেটপ্লেসগুলো আপনাকে কাজ পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা বাবদ আপনার ইনকামের ছোট একটি অংশ কেটে রাখবে।
FAQ
মানুষের মনে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খায়; আসলেই এটা করে ইনকাম করা যায় কি না। এবার কিছু কমন প্রশ্ন এবং উত্তর জেনে নেওয়া যাক।
১। ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সত্যি ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করা যায়। কি পরিমাণ টাকা আয় করা যায় তা নির্ভর করে কোন কাজ কি পরিমাণ করে তার উপর। আর কি পরিমাণ কাজ করে তা নির্ভর করবে কি পরিমাণ কাজ পারে তার উপর। কেউ কেউ প্রতি মাসে ৫-৭ লাখ টাকা ইনকাম করে। আবার কেউ দিনের পর দিন বসে থাকে কাজের অভাবে।
সুতরাং, টাকার চিন্তা আপাতত বাদ দিয়ে ভালো করে কাজ শিখুন।
২। ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কি কি যোগ্যতা লাগে?
উত্তরঃ একাডেমিক সার্টিফিকেট বা নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তবে ইংলিশে পারদর্শিতা আবশ্যক। ইংলিশ রাইটিং, রিডিং, লিসেনিং ও স্পিকিং এর যোগ্যতা অবশ্যই দরকার; তা না হলে কাজ জেনেও কাজ পাবেন না।
৩। ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে?
উত্তরঃ আপনি কোন বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স শিখছেন তার উপর নির্ভর করে কতদিন লাগবে। স্বাভাবিক ভাবে ৩ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে সব কোর্স মোটামুটি শেখা যায়। তবে, কথায় আছে শেখার শেষ নেই।
৪। ফ্রিল্যান্সিং কোথায় শিখবো?
উত্তরঃ ফ্রিল্যান্সিং আপনি অনেকভাবে অনেক জায়গা থেকেই শিখতে পারেন। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ থাকবে–
আগে পেইড কোর্সে না যেয়ে ইউটিউব ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ফ্রি রিসোর্স থেকে আগ্রহের বিষয়ে ভিডিও দেখুন। অনেক সময় দেখা যায়, হুট করে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্স কিনে কয়েকটি ভিডিও দেখার পর এতে আগ্রহ থাকে না। মনে হয় গ্রাফিক্স ডিজাইন না, আমার কন্টেন্ট রাইটিং এ দক্ষতা অর্জন করা উচিত। কিন্তু এরই মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্স কিনে বেশকিছু টাকা অপচয় করে ফেলেছেন।
তাই আগে ফ্রি রিসোর্স দেখে যাচাই করুন আপনার জন্য ফ্রিল্যান্সিং এর কোন সেক্টর উপযুক্ত। আর হ্যাঁ, এমনটা নয় যে ইউটিউব বা ফ্রি রিসোর্স থেকে আপনার পছন্দের বিষয়ে পূর্নাঙ্গ দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। আপনি যদি সেলফ্ লার্নার হন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে পারদর্শিতা থাকে তাহলে ফ্রিতেই ফ্রিল্যান্সিং শিখে মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারবেন।
৫। ফ্রিল্যান্সিং শেখার সেরা প্রতিষ্ঠান কোনগুলো?
অনলাইন কিংবা অফলাইন, সর্বত্রই ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টারের অভাব নেই। তবে অভাব আছে শুধু মানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য ট্রেইনিং সেন্টারের। যদি ট্রেইনিং সেন্টার থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান তাহলে আমাদের পরামর্শ থাকবে অনলাইন কোর্সে ভর্তি না হয়ে সরাসরি ট্রেইনিং সেন্টারে ভর্তি হোন। কারণ, অনলাইন কোর্সে আমাদের আগ্রহ ধরে রাখা অনেকটাই কঠিন হয়ে যায়, যদি না এবিষয়ে সিরিয়াস হোন।
এটা সত্য যে, অনলাইনে কম খরচে ভালো মানের কোর্স পাওয়া যায়। যদি অনলাইন কোর্স পার্সেস করতে চান তাহলে অভিজ্ঞ মেন্টরের কোর্স পার্সেস করুন।
নিচে কিছু বিশ্বস্ত অনলাইন ও অফলাইন ফ্রিল্যান্সিং শেখার প্রতিষ্ঠান বা ওয়েবসাইটের নাম দেয়া হলো:-
1. Udemy
2. Coursera
3. Skillshare
4. Simplilearn
5. LinkedIn Learning
6. Coders Trusts BD
7. Creative IT Institute
৬। ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে?
ফ্রিল্যান্সিং করতে মূলত নিচে উল্লেখিত বিষয়ে খরচ হয়-
১। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ ক্রয় (স্থায়ী খরচ)
২। ইন্টারনেট বিল (চলমান)
৩। কোর্স ফি (সবার জন্য না)
পেইড কোর্স করবেন কি না এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করবে। এছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই। শুরুতে এগুলোই যথেষ্ট।
আর হ্যাঁ, আপনি যদি ভয়েস আর্টিস্ট (Voice Artist) হিসাবে কাজ করতে চান তাহলে অতিরিক্ত মাইক্রোফোন ও স্টুডিও সেট আপ বাবদ খরচ করতে হবে।
অনেকের আবার আগে থেকেই কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি থেকে থাকে। এবার নিজেই হিসাব করতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে আপনার কত টাকা লাগবে।
৭। ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল না কি হারাম?
অনেকের মনেই এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খায় যে, “ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম?” সত্য কথা বলতে, মৌলিকভাবে এটাকে হারাম বলার সুযোগ নেই।
ফ্রিল্যান্সার হিসাবে আপনি কোন সার্ভিস প্রোভাইড করবেন সেটার উপর নির্ভর করবে হালাল-হারাম। যে কাজটি অফলাইনে হারাম বা হালাল সেই কাজটি অনলাইনে করলেও একই বিধান।
তবেও এটাও সত্য যে, এই সেক্টরে হালালের চেয়ে হারামের ছড়াছড়ি বেশি। আবার হালাল হারাম বেছে কাজ করাও অসম্ভব কিছু না।
৮। ডিজিটাল মার্কেটিং কী?
সাধারণত আমরা মার্কেটিং বলতে বুঝি কোনো প্রডাক্ট বা সেবার প্রচারণা করা। তবে সেই প্রচারণা যদি ডিজিটালভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে করা হয় তখন সেটা হয়ে যায় ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing)। আরো সহজ ভাষায় ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে সম্পাদিত মার্কেটিংকে বোঝায়। সাধারণত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট বা অন্য ডিভাইসে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রচারাভিযান চালানো হয়।
৯। ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখব?
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখার জন্য আপনি ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে চাইলে আপনারা ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারেন। তবে ইউটিউব দেখে শিখার ক্ষেত্রে আপনি সরাসরি কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না বা আপনার তাগিদও থাকবে কম। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং শিখার জন্য আপনি কোর্স করতে পারেন। বিস্তারিত জানতে “ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখব” শীর্ষক এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
সর্বশেষ
আজকের আর্টিকেলে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ফ্রিল্যান্সিং শেখার এবং করার জন্য প্রথমে কি কি করতে হবে, কিভাবে করতে হবে তার সম্পূর্ণ গাইডলাইন। এই পোস্টটি পড়ে একজন ব্যক্তি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে সাধারণ ধারণা পাবেন।
আশা করছি, সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর এ বিষয়ে আর কোনো অজানা কিছু থাকবে না। এরপরেও কিছু জানার থাকলে এই পোস্টে কমেন্ট করুন।
নতুন নতুন লেখা পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে। এছাড়াও চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে।